শনিবার, জুন ৭, ২০২৫
প্রচ্ছদ্ধসংবাদসরকার ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের জন্য ইসিকে চিঠি দেওয়ার প্রস্তুতিতে

সরকার ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের জন্য ইসিকে চিঠি দেওয়ার প্রস্তুতিতে

spot_img
spot_img

জাতীয় নির্বাচন না স্থানীয় নির্বাচন আগে হবে—এই বিতর্কের মাঝে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে শপথ দেওয়ার দাবিতে চলমান আন্দোলন পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। এই উত্তেজনা ও বিতর্কের মধ্যেই সরকার ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে। একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগ শীঘ্রই নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) এ বিষয়ে চিঠি পাঠাতে যাচ্ছে।

সূত্র জানায়, ডিএসসিসিতে সৃষ্ট সংকট এবং দুই সিটিতে নাগরিক সেবার বিঘ্ন ঘটায় সরকার এই নির্বাচনের উদ্যোগ নিচ্ছে। আইন অনুযায়ী, স্থানীয় সরকার বিভাগ ইসিকে চিঠি দিয়ে নির্বাচনের নির্দেশ দিলে কমিশন ভোটের প্রক্রিয়া শুরু করে। ইসি জানিয়েছে, কোন নির্বাচন আগে হবে, তা সরকার নির্ধারণ করবে, আর তারা কেবল সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘২০২৪ সালের স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশের বিধান অনুযায়ী, জনপ্রতিনিধিদের অপসারণের কারণে নাগরিক সেবায় বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। তাই স্থানীয় নির্বাচন অত্যন্ত জরুরি। এজন্য আমরা ইসিকে চিঠি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি, এবং শিগগিরই বিস্তারিত নির্দেশনা পাঠানো হতে পারে।’

এর আগে, এক ব্যক্তি ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনের দাবিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিনকে চিঠি দিয়েছেন। তিনি নিজেকে জুলাই আন্দোলনের সংগঠক এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার তিনি ইসির প্রাপ্তি ও জারি শাখায় চিঠিটি জমা দেন। চিঠিতে বলা হয়, ঢাকার দুই সিটিতে প্রায় দুই কোটি মানুষের বাস। নির্বাচিত প্রতিনিধি না থাকায় কার্যক্রম পরিচালনা কঠিন, এবং নাগরিকদের ভোগান্তি বাড়ছে। নির্বাচন ছাড়া নাগরিক সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমতুল্য। তাই ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির নির্বাচন জরুরিভাবে আয়োজনের অনুরোধ করা হয়েছে।

অন্যদিকে, নির্বাচন সংস্কার কমিশন জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের সুপারিশ করেছিল এবং নির্দলীয় নির্বাচনের জন্য আইন সংশোধনের পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন না করার দাবিতে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের জন্য চাপ দিচ্ছে। তবে সরকারপ্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে আগামী জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন সম্ভব। এই প্রেক্ষাপটে সরকার স্থানীয় নির্বাচনের পদক্ষেপ নিচ্ছে।

ইশরাক হোসেনকে ডিএসসিসির মেয়র হিসেবে শপথ দেওয়ার দাবিতে তার সমর্থকরা ধারাবাহিক আন্দোলন চালাচ্ছেন। নগর ভবনে তালা ও অবরোধের কারণে ডিএসসিসির কার্যক্রম প্রায় থমকে গেছে, ফলে নাগরিকদের ভোগান্তি তীব্র হয়েছে। নগর ভবনের ভেতরের সেবা এবং বাইরের আটটি আঞ্চলিক কার্যালয় বন্ধ রয়েছে।

ডিএসসিসির প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে নগর ভবনের সব সেবা বন্ধ। আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোও বন্ধ থাকায় ঢাকা দক্ষিণের নাগরিকদের কোনো সেবা দেওয়া যাচ্ছে না।’

২০২০ সালের ১৬ মে থেকে শেখ ফজলে নূর তাপস ডিএসসিসির মেয়র ছিলেন। গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে তিনি দেশ ত্যাগ করেন। একইভাবে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ২০২০ সালের ১৬ মে থেকে দায়িত্বে ছিলেন। ৫ আগস্টের পর তিনি আত্মগোপনে যান এবং পরে ছাত্র-জনতা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। এই পরিস্থিতিতে গত ১৯ আগস্ট দুই সিটির মেয়র পদ শূন্য ঘোষণা করে সরকার প্রশাসক নিয়োগ দেয়। নিয়ম অনুযায়ী, দুই সিটির মেয়রের মেয়াদ গত ১৫ মে শেষ হয়েছে।

২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে শেখ ফজলে নূর তাপস ইশরাক হোসেনকে প্রায় পৌনে দুই লাখ ভোটে পরাজিত করেন। তবে ২০২৫ সালের ২৭ মার্চ একটি নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে। ২৭ এপ্রিল ইসি গেজেট প্রকাশ করলেও পরদিন সুপ্রিম কোর্টের দুজন আইনজীবী লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। ২৮ এপ্রিল আইনজীবী মো. মামুনুর রশিদের নোটিশে রায় ও শপথ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠে। এ বিষয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়, এবং গত মঙ্গলবার শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার আদেশের জন্য দিন নির্ধারিত হয়।

নিয়ম অনুযায়ী, গেজেট প্রকাশের পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় শপথের আয়োজন করে। কিন্তু শপথের তারিখ ঘোষণা নিয়ে ইশরাক সমর্থকদের আন্দোলন চলছে। সরকার এখনও ইশরাকের শপথ নিয়ে স্পষ্ট কিছু জানায়নি। মঙ্গলবার স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, আইনি ও মেয়াদ-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জটিলতা নিরসন করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এনসিপি ইসির সামনে স্থানীয় নির্বাচন ও ইশরাকের শপথের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে। এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, স্থানীয় নির্বাচন না হওয়ায় নাগরিক সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে, এবং প্রশাসনিক কার্যালয়গুলো একটি দলের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে। ডিএসসিসির অচলাবস্থার জন্য ইসি দায়ী। তারা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল না করে গেজেট প্রকাশ করেছে, যা অবোধগম্য। স্থানীয় নির্বাচনই এখন একমাত্র সমাধান।

স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ‘জনগণের ভোগান্তি সরকারের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এই সংকট নিরসনে আমরা কাজ করছি। সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে বিস্তারিত জানানো হবে।’

নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘কোন নির্বাচন আগে হবে, তা সরকার নির্ধারণ করবে। ইসির কাজ শুধু নির্বাচন আয়োজন করা।’

আরো পড়ুন
- বিজ্ঞাপন -

সর্বাধিক পাঠিত