বৃহস্পতিবার, মার্চ ১৩, ২০২৫
প্রচ্ছদ্ধসংবাদরাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে সবাইকে ‘শাহবাগী’ বলা বন্ধ করতে হবে: মাহফুজ আলম

রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে সবাইকে ‘শাহবাগী’ বলা বন্ধ করতে হবে: মাহফুজ আলম

spot_img
spot_img

রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে সবাইকে ‘শাহবাগী’ বলা বন্ধ করতে বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।

গতকাল বুধবার (১২ মার্চ) দীর্ঘ এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, “শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনে অংশ নেওয়া অনেক ব্যক্তি গত কয়েক বছর শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। তাদের অনেকে আহত হয়েছেন, কেউ কেউ জীবন দিয়েছেন। শাপলা-শাহবাগের কর্মীরা একসঙ্গে লড়াই করেছেন বলেই শেখ হাসিনার পতন সম্ভব হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “তারা ইতোমধ্যেই তাদের রাজনৈতিক ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করেছেন। জামায়াত একসময় যুদ্ধাপরাধের সহযোগী ছিল, তবে বর্তমান অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তারা কাফফারা দিয়েছেন। আমি বিশ্বাস করি, জামায়াতের বাংলাদেশপন্থী অংশ এদেশে রাজনীতি করার অধিকার রাখে। রাজনৈতিক ও আদর্শিক লড়াইয়ের মাধ্যমেই তাদের মোকাবিলা করতে হবে, শুধুমাত্র ‘স্বাধীনতাবিরোধী’ ট্যাগ দিয়ে তাদের অধিকার ক্ষুণ্ন করা উচিত নয়।”

তিনি ব্যাখ্যা করেন, “শাহবাগের আন্দোলনে অংশ নেওয়া অনেকে শুধুমাত্র যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গিয়েছিলেন। তরুণদের আবেগকে আওয়ামী লীগ ও বামপন্থী মুজিববাদীরা ব্যবহার করে দেশে মবোক্রেসি প্রতিষ্ঠা করেছিল। এর ফলে বিরোধী দলীয় কর্মীদের গুম, খুন, নির্যাতন ও নিপীড়ন সহজ হয়েছিল।”

“তবে, শাহবাগের আন্দোলনে অংশ নেওয়া অনেকে তাদের ভুল বুঝতে পেরে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। তারা আমাদের কমরেড, আমাদের সহযোদ্ধা। তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আওয়ামী লীগের পতন নিশ্চিত করেছেন।”

তিনি নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, “আমি শাপলায় নবীজির ভালোবাসায় এসেছিলাম, জামায়াতের যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে আমার কোনো আগ্রহ ছিল না। জামায়াতের অনেক নেতাকে শর্ষিণা মাদ্রাসায় ভ্রান্ত আকিদার অনুসারী বলা হতো। জামায়াতকে বরাবরই আলেম-ওলামা বিরোধী হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “শাপলার কর্মীদের একটি বড় অংশ জামায়াতের আকিদা ও নেতৃত্বের বিরোধী ছিল। কিন্তু, জামায়াত তাদের কৌশলে ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছিল, ঠিক যেমন আওয়ামী লীগ ‘শাহবাগী’দের ব্যবহার করেছিল।”

“আমরা এখন এক সংলাপমুখর সময়ে উপনীত হয়েছি। শাপলা-শাহবাগের বাইনারির বাইরে এসে সবাইকে একত্রিত হয়ে মুজিববাদ, ভারতপন্থা ও শেখ পরিবারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। গণ-অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও মৈত্রী বাড়াতে হবে, শত্রু কমাতে হবে এবং চিহ্নিত শত্রুর দীর্ঘমেয়াদে পরাজয় নিশ্চিত করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শাপলার গণহত্যার বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা শাপলার হত্যাযজ্ঞ ডকুমেন্টেশনের কথা বলেছেন। আশা করি, এই হত্যাযজ্ঞের সুষ্ঠু তদন্ত, ডকুমেন্টেশন ও বিচার নিশ্চিত হবে।”

“অভ্যুত্থান-উত্তর বাংলাদেশে শাহবাগের মবোক্রেসি ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি সব পক্ষকেই ত্যাগ করতে হবে। গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও সংলাপের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে। শাহবাগের ছাত্র-তরুণরা যারা মুজিববাদ ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, তাদেরকে ‘শাহবাগী’ ট্যাগ দিয়ে প্রতিহিংসার শিকার করা উচিত নয়। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে সবাইকে ‘শাহবাগী’ বলা বন্ধ করতে হবে।”

আরো পড়ুন
- বিজ্ঞাপন -

সর্বাধিক পাঠিত