মঙ্গলবার, আগস্ট ১৯, ২০২৫
প্রচ্ছদ্ধসংবাদমে দিবস ২০২৫: শ্রমিকের অধিকার ও সংগ্রামের প্রতীক

মে দিবস ২০২৫: শ্রমিকের অধিকার ও সংগ্রামের প্রতীক

spot_img
spot_img

আজ সারা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস, যা ‘মে দিবস’ নামে পরিচিত। এই দিনটি শ্রমজীবী মানুষের অধিকার, মর্যাদা এবং ন্যায্য মজুরির জন্য তাদের সংগ্রামের স্মারক হিসেবে বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হয়। বাংলাদেশে এই দিনটি শ্রমিকদের কঠোর পরিশ্রম ও ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি তাদের জীবনমান উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি নবায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ।

মে দিবসের উৎপত্তি ১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে। শ্রমিকরা দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের সময়সীমা নির্ধারণের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। তাদের এই সংগ্রামের পথে অনেকে প্রাণ হারান, যা ‘হেমার্কেট গণহত্যা’ নামে ইতিহাসে চিহ্নিত হয়েছে। এই ঘটনা শ্রমিক আন্দোলনকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৮৮৯ সালে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ১ মে দিনটিকে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে শ্রমিকদের অবদান অপরিসীম। বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্প, নির্মাণ, কৃষি এবং অনানুষ্ঠানিক খাতে লাখো শ্রমিক দিনরাত পরিশ্রম করে দেশের অর্থনৈতিক চাকাকে সচল রাখছেন। তবে, ন্যায্য মজুরি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ, এবং সামাজিক নিরাপত্তার অভাব এখনও অনেক শ্রমিকের জন্য চ্যালেঞ্জ। মে দিবস এই সমস্যাগুলোর সমাধানে সরকার, মালিকপক্ষ এবং শ্রমিক সংগঠনগুলোর মধ্যে সংলাপের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম।

এ বছর মে দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে “শ্রমিকের মর্যাদা, অর্থনীতির ভিত্তি”। এই প্রতিপাদ্য বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ শ্রমিকদের উন্নত জীবনমান ছাড়া টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নয়।

আজ ঢাকাসহ সারা দেশে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন এবং রাজনৈতিক দল মে দিবস উপলক্ষে শোভাযাত্রা, সমাবেশ এবং আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শ্রমিক সমাবেশে বক্তারা শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি, সামাজিক নিরাপত্তা এবং কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার উন্নতির দাবি জানান। এছাড়া, গার্মেন্টস শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, শ্রমিকদের কল্যাণে সরকার নতুন শ্রম আইন প্রণয়ন এবং কর্মপরিবেশ উন্নত করতে কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, “শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা চাই শ্রমিকরা নিরাপদ ও সম্মানজনক জীবনযাপন করুক।”

ঢাকার একজন গার্মেন্টস শ্রমিক রহিমা বেগম বলেন, “আমরা কঠোর পরিশ্রম করি, কিন্তু আমাদের মজুরি দিয়ে সংসার চালানো কঠিন। মে দিবসে আমরা আশা করি আমাদের দাবিগুলো শোনা হবে।” এমন অনেক শ্রমিকের কণ্ঠে একই প্রত্যাশা। বিশেষ করে, রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর থেকে গার্মেন্টস শিল্পে নিরাপত্তার উন্নতি হলেও, এখনও অনেক কারখানায় নিরাপত্তার মান পুরোপুরি মানা হয় না।

মে দিবস শুধু একটি দিনের উদযাপন নয়, এটি শ্রমিকদের সংগ্রাম, ত্যাগ এবং অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের একটি প্রতিশ্রুতি। বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে শ্রমিকদের অবদানকে মূল্যায়ন করে তাদের জীবনমান উন্নত করতে সরকার, মালিকপক্ষ এবং সমাজের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। এই মে দিবসে আসুন আমরা শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই এবং তাদের অধিকার নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করি।

আরো পড়ুন
- বিজ্ঞাপন -

সর্বাধিক পাঠিত