মঙ্গলবার, জুলাই ১, ২০২৫
প্রচ্ছদ্ধখেলাবিসিবির নৈতিক পরাজয়: তাওহীদ হৃদয়ের নিষেধাজ্ঞা ঘিরে বিতর্ক

বিসিবির নৈতিক পরাজয়: তাওহীদ হৃদয়ের নিষেধাজ্ঞা ঘিরে বিতর্ক

spot_img
spot_img

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিলেট টেস্টে জাতীয় দলের দুর্বল পারফরম্যান্স নিয়ে সমালোচনার মধ্যে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) নতুন বিতর্কে জড়িয়েছে। মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের অধিনায়ক তাওহীদ হৃদয়ের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিসিবির বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন ক্রিকেট মহলে উত্তপ্ত আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

গত ১২ এপ্রিল ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচে আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের জন্য হৃদয়ের ওপর এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা, ৪টি ডিমেরিট পয়েন্ট এবং ৮০ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ করা হয়। পরে গণমাধ্যমে আম্পায়ারদের বিরুদ্ধে মন্তব্য করায় তার শাস্তি বাড়িয়ে দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা করা হয়। কিন্তু মোহামেডানের চাপে বিসিবি ডিপিএলের নিয়ম (বাইলজ ৭.৫ ধারা) সংশোধন করে শাস্তি কমিয়ে এক ম্যাচে নামায়, যা নিয়মের বাইরে ছিল। এর ফলে হৃদয় ২০ এপ্রিল অগ্রণী ব্যাংকের বিপক্ষে খেলার সুযোগ পান।

এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান এনামুল হক মনি পদত্যাগ করেন। আইসিসির এলিট আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা প্রাথমিকভাবে পদত্যাগের ঘোষণা দিলেও পরে তা প্রত্যাহার করেন। তীব্র সমালোচনার মুখে বিসিবি ২৪ এপ্রিল হৃদয়ের এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তামিম ইকবালের নেতৃত্বে ক্রিকেটারদের চাপে বিসিবি আবার পিছু হটে। হৃদয়ের নিষেধাজ্ঞা এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়, যা পরবর্তী ডিপিএল মৌসুমের প্রথম ম্যাচে কার্যকর হবে। ফলে হৃদয় চলতি সুপার লিগের বাকি দুটি ম্যাচে মোহামেডানের হয়ে খেলতে পারবেন।

২৫ এপ্রিল মিরপুরে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের সঙ্গে বৈঠকে তামিম ইকবাল শাস্তির পুনর্বহালকে “অযৌক্তিক” আখ্যা দিয়ে বলেন, “হৃদয় তার শাস্তি পূরণ করেছে। দুই ম্যাচ খেলার পর তাকে আবার নিষিদ্ধ করার কোনো ভিত্তি নেই।” বৈঠকে বিসিবির পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম এবং আম্পায়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান ইফতেখার রহমান উপস্থিত ছিলেন।

নাজমুল আবেদীন ফাহিম এই ঘটনাকে বিসিবির “নৈতিক ব্যর্থতা” হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “ভুল সিদ্ধান্তের কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। নিয়মের বাইরে শাস্তি কমানো এবং পরে তা ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা আমাদের দুর্বলতা প্রকাশ করে। এই পরিবেশে কিছু গোষ্ঠী চাপ সৃষ্টি করে সুবিধা আদায় করছে, যা ক্রিকেটের জন্য ক্ষতিকর।”

এই ঘটনা বিসিবির সিদ্ধান্ত গ্রহণে অসংগতি এবং প্রভাবশালী গোষ্ঠীর চাপের কাছে নতি স্বীকারের প্রবণতা উন্মোচন করেছে। ক্রিকেটারদের চাপে টেকনিক্যাল কমিটির সিদ্ধান্ত বাতিলের এমন ঘটনা বিশ্ব ক্রিকেটে বিরল। এটি বিসিবির শৃঙ্খলা ও নিরপেক্ষতার ওপর প্রশ্ন তুলেছে, যা বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।

আরো পড়ুন
- বিজ্ঞাপন -

সর্বাধিক পাঠিত