বিগত সরকারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদের এমপিদের শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা ৩৪টি গাড়ি নিলামে উঠছে। সংসদ ভেঙে যাওয়ায় এসব বিলাসবহুল গাড়ি নিয়মিত শুল্ক-কর পরিশোধ করে খালাস করতে হবে সাবেক সংসদ সদস্যদের।
এ প্রক্রিয়ায় খালাস না করলে নিলামে উঠবে এসব গাড়ি। এরই মধ্যে মোংলা কাস্টম হাউস থেকে চারটি প্রাডো গাড়ি নিলামের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
জানা যায়, বর্তমানে নাভানার মাধ্যমে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা সাবেক এমপিদের ২৬টি গাড়ি চট্টগ্রাম বন্দরে রয়েছে। বিলাসবহুল এসব গাড়ির মধ্যে আমদানিকারক নাভানা তিনটি খালাসের জন্য আবেদন করেছে।
আরেকটি গাড়ির জন্য অন্য একটি পক্ষ আবেদন করেছে, যাদের পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া মোংলা কাস্টম হাউসে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা চারটি প্রাডো গাড়ি নিলামের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আগামী ২৫ নভেম্বর এই চারটি গাড়ি নিলামের কথা রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে মোংলা কাস্টম হাউস সূত্র।
এর আগে দ্বাদশ সংসদের এমপিরা গত জুলাই-আগষ্টে শুল্কমুক্ত সুবিধায় প্রায় ৪৪টি বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি করেন। এসব গাড়ির মধ্যে প্রায় ১০টি সংসদ ভাঙার আগেই খালাস করে নেন সাবেক এমপিরা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, শুধু সংসদ সদস্যরা শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানির সুযোগ পান।
প্রতিটি গাড়ির শুল্ক-করসহ দাম পড়বে ৮ থেকে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত। অর্থাৎ সিসি ভেদে এসব গাড়ির শুল্ক পরিশোধ করতে হবে সাড়ে ৮শ শতাংশ পর্যন্ত।
জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের কিছুদিন আগে সাবেক সংসদের উপনেতা সাজেদা চৌধুরী চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস দিয়ে একটি বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি করেন; কিন্তু খালাসের আগেই তিনি মারা যান।
পরে এই গাড়ি খালাসের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধা চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস থেকে এনবিআরের মাধ্যমে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হয়। এতে আইন মন্ত্রণালয় শুল্ক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এনবিআরকে জানায়। এ পরিপ্রেক্ষিতে সাবেক এই সংসদ উপনেতা সংসদ সদস্য না থাকায় তার গাড়ির শুল্কমুক্ত সুবিধা বাতিল হয়ে যায়।
পরবর্তী সময়ে সংসদ বাতিল হওয়ার কারণে এমপিদের গাড়ির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এনবিআরের মাধ্যমে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস।
এই মতামতে মন্ত্রণালয় বলছে, যেহেতু সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে, তাই তারা সংসদ সদস্য হিসেবে অধিষ্ঠিত নেই। তাই কাস্টম আইন-২০২৩-এর ৯৪ ধারা অনুযায়ী এসব গাড়ির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে কাস্টম কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সাবেক কমিশনার মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান কালবেলাকে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী, নিয়মিত শুল্ক-কর পরিশোধের জন্য এখন সংশ্লিষ্ট আমদানিকারককে চিঠি দেওয়া যেতে পারে।
যদি আমদানিকারকরা নিয়মিত শুল্ক-কর পরিশোধ করে গাড়ি খালাস করতে না চান, তাহলে আইন অনুযায়ী নিলামের ব্যবস্থা করতে পারবে কাস্টম কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, এমপিদের গাড়ির মধ্যে রয়েছে মার্সিডিজ, বিএমডব্লিউ, জাগোয়ার, টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার, রেঞ্জ রোভার, মিতসুবিশি, ফোর্ড, লেক্সাস ব্র্যান্ডের গাড়ি। বিলাসবহুল এসব গাড়ির শুল্কসহ প্রতিটির বাজারমূল্য ৮ থেকে ১০ কোটি টাকা।
গাড়িগুলোর ইঞ্জিন ক্যাপাসিটি তিন থেকে চার হাজার সিসি। স্বাভাবিকভাবে এ ধরনের গাড়ির ওপর ৮৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হয়ে থাকে। কিন্তু এমপিরা এসব গাড়িতে পেতেন শতভাগ শুল্কমুক্ত সুবিধা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এমপিদের শুল্কমুক্ত সুবিধা বাতিল করে সংসদে শুল্কারোপের প্রস্তাব উঠলেও এমপিদের বাধার মুখে তা বাতিল হয়ে যায়।
যাদের আমদানি করা গাড়ি বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে তাদের মধ্যে আছেন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সাবেক এমপি এসএম আল মামুন, বাঁশখালীর মুজিবুর রহমান, খুলনার এস এম কামাল হোসেন, নওগাঁর সুরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, গাইবান্ধার শাহ সরোয়ার কবির, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এসএকে একরামুজ্জামান, নেত্রকোনার সাজ্জাদুল হাসান, ঝিনাইদহের নাসের শাহরিয়ার জাহেদী, যশোরের তৌহিদুজ্জামান, সুনামগঞ্জের মুহাম্মদ সাদিক, ময়মনসিংহের আবদুল ওয়াহেদ, জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ, সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, মাগুরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ফয়জুর রহমান, লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক পিংকু, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান মঞ্জু, সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরি ও সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য তারানা হালিম।