সরকার পতনের পর পর শুরু হয় এই হামলা। তীব্র গণ আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর কার্যত সরকারবিহীন চার দিনে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় সারাদেশে ছড়িয়েছিলো সহিংসতা।
গত ১৮ আগস্ট বাকলিয়া থানাধীন নতুনব্রীজ মোড় ১৭নং টেম্পু স্টেশন’ দখলসহ একাধিক শ্রমিকদের বসতবাড়ি নবাব খা কলোনী ভাংচুর ও লুটপাট চালায় একাধিক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী’রা।
নগরীর শাহ আমানত সেতু (নতুন ব্রীজ) এলাকার বশিরুজ্জামান চত্বর থেকে টাইগার পাস পর্যন্ত ১৭ নম্বর সড়কে চলাচলরত অটোটেম্পু থেকে ছাত্র, বিএনপি, পুলিশের নামে নতুন করে বেপরোয়া চাঁদাবাজি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কথিত শ্রমিক লীগ নেতা জাহেদ প্রকাশ টেম্পো জাহিদ ও কথিত শ্রমিক লীগ নেতা আলী ইমাম বিএনপির নেতা পরিচয়ে অটোটেম্পু স্টেশন দখল করে বসে। দখলে নেওয়ার পর ছাত্র,বিএনপি ও প্রসাশনের নাম দিয়ে মাসে প্রায় অর্ধকোটি টাকা চাঁদাবাজি করছে বলে অভিযোগ তুলছেন এই রুটের গাড়ি চালকেরা। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে চাঁদাবাজরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এসব চাঁদাবাজ।
গত সরকার আমলে এই লাইনে একটা গ্রুপের কাছে পরিবহন শ্রমিকরা জিম্মি ছিলো । এখন নতুন করে জিম্মি করে রাখছে, সংগঠনের নামে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।তাদেরকে শেল্টার দিচ্ছে বিএনপি’র একাধিক নেতা।মূলত আলী ইমাম ও জাহিদ গ্রুপটি কিশোর গ্যাং লিডারে সক্রিয়। তারা সবাই ছিল সাবেক শিক্ষা মন্ত্রী নওফেল এর কর্মী। এখন সবাই বিএনপির নেতা নবাবখাঁর ছেলে ইয়াকুব গ্রুপ ও কোতোয়ালি থানা যুবদলের সাবেক আহবায়ক নূরু গ্রুপের কর্মী পরিচয়ে প্রতিনিয়ত চাঁদা তুলছেন, আলী ইমাম,জুয়েল,গিয়াস উদ্দিন,মাদক মামলার আসামী রুবেল সহ অনেকে।
নগরীর শাহ আমানত সেতু বশিরুজ্জামান চত্ত্বর থেকে টাইগার পাস পর্যন্ত ১৭ নম্বর রুটে প্রায় ৩২০ টি মাহিন্দ্রা টোম্পো চলাচল করে। কিন্তু এই সড়কে ১৪৫ টির মতো গাড়ির রোড পারমিট আছে। বাকি গাড়িতে রোড পারমিট নেই। তাই প্রতিমাসে আলী ইমাম ও জাহিদের ব্যানারে ও বিএনপি নেতার নামে ১০০ টি চলবে বলে প্রতি গাড়ির থেকে ১ হাজার টাকা করে ও বাকি গাড়ি থেকে ২ হাজার টাকা করে ৫০/৬০ লক্ষ টাকা আদায় করার কথা হয়। এছাড়া সড়কে যানজট ও ট্রাফিক পুলিশ কনভিন্সের নামে প্রতিটি গাড়ি থেকে দৈনিক ১৫০/২৫০ টাকা করে ৭৫ হাজার চাঁদা আদায় করছে তারা। বর্তমানে চাঁদা তুলছেন গিয়াস উদ্দিন, ছোট আলী,জুয়েল,বদী সহ আরও অনেকে।আন পারমিট গাড়ি লাইনে যুক্ত হতে হলে লাগবে মোটা অংকের টাকা।
দখল,লুটপাট ও হামলার ঘটনায় ড্রাইভার মোহাম্মদ হিরু নামে শ্রমিকের স্ত্রী রেজিয়া বেগম (৩৪) বাকলিয়া থানায় ২২ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন ৮ই অক্টোবরে। মামলায় আসামি’রা হলেন, গিয়াস উদ্দিন, ইকবাল,বসর,রুবেল,সুজন,আবু সালেক,ইসমাইল সহ অনেকে।
মামলার এজাহার সূত্রে তথ্য অনুযায়ী, সরকার পতন পরবর্তী হইতে উল্লেখিত আসামী’রা বাকলিয়া থানাধীন বিভিন্ন এলাকায় লুটপাট, ভাংচুর, মারধর, দখল, বেদখল, চাঁদাবাজি’সহ সীমাহীন নৈরাজ্য চালাইতে থাকে। ১৮ আগস্ট বিকালে উল্লেখিত সকল আসামী’সহ অজ্ঞাতনামা আসামী সহকারে বেআইনী জনতাবদ্ধে দেশীয় অস্ত্র, কিরিচ, দা, ছোরা, লোহার রড, কাঠের লাঠি’সহ বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হইয়া নবাব যী কলোনীস্থ বসত ঘরসহ আশপাশের এলাকায় একসাথে হামলা করে। তৎক্ষণাৎ আসামী’রা তাদের অপকর্মের প্রমান যেন না থাকে সেই লক্ষ্যে দুইভাগে ভাগ হইয়া রাস্তার আশেপাশে বিভিন্ন দোকানপাটে থাকা সিসি টিভি ক্যামেরা লক্ষ্য করিয়া ভাঙচুর চালায়।তাহাদেরকে বাধা প্রদান করিলে,একাধিক টেম্পু ড্রাইভারকে তারা দেশীয় অস্ত্র সশস্ত্র নিয়ে আঘাত করলে রক্তাক্ত গুরুতর জখম প্রাপ্ত ড্রাইভারকে মেডিকেল পাঠানো হয়।
টেম্পো স্টেন এর পাশে নবাব খা কলৌনীতে একাধিক শ্রমিকের বাসায় হামলা ও লুটপাট চালায় অপরাধীরা।প্রত্যেকের বাসা থেকে টিভি, ফ্যান, ফ্রীজ, টাকা পয়সা, স্বর্ণালংকার, আসবাবপত্র সহ নগদ টাকা পয়সা নিয়ে যায়।শ্রমিকদের বাসায় হামলা লুটপাট চালানোর পর নতুন ব্রীজ টি.আই, বক্স সংলগ্ন রাস্তার পশ্চিম পাশে বকুল সাহেবের বালুর সেইল সেন্টার সংলগ্ন, শ্রমিকদের ট্রান্সপোর্ট অফিসে ঢুকে টিভি, ব্রীজ, ফ্যান, নগদ অর্থ সহ বিভিন্ন অফিসিয়াল দলিলাদি নিয়ে যায়। টান্সপোর্ট অফিসের দক্ষিণপাশে পার্কিংকৃত একটি এক্স করোলা প্রাইভেট কার যাহারনং-চট্টমেট্রো-খ-১১-১০৫১ এলোপাথাড়ি লোহার রড দ্বারা আঘাত করিয়া ভাঙচুর করে।
মামলা বাদী রেজিয়া বেগম বলেন, ”আমি আমার স্বামী মোহাম্মদ হিরুসহ নতুন ব্রিজ নবাবখাঁ কলোনীতে বসবাস করি। হঠাৎ করে আমার বাসায় এসে এলোপাতাড়ি ভাবে হামলা চালায় চিন্তিত আসামি’রা। আমাকে বিভিন্ন ভাবে কথার মাধ্যমে হেনস্তা করে এবং আমার স্বামীকে গালি দিতে থাকে।এক পর্যায়ে আমার বাসায় হামলা চালিয়ে সব জিনিস পত্র নিয়ে যায় তারা। আমি গরিব মানুষ আমার স্বামী একজন ড্রাইভার কিভাবে চলবো বর্তমান সরকারের কাছে আমি অপরাধীদের বিচার চাই এবং আমাদের নিরাপত্তা চাই।”
আহত আবুল কাশেম বলেন, ”আমি প্রতিদিনের তুলনায় গাড়ি চালায় নিউমার্কেট থেকে ভাড়া নিয়ে নতুন ব্রিজ আসিলে আমাকে এলোপাতাড়ি ভাবে দেশীয় অস্ত্র সশস্ত্র দিয়ে আঘাত করে রুবেল,গিয়াসউদ্দিন, ইকবাল,আলী,আলী ইমাম সহ আরো অনেকে।তারা মূলত আমাদের এই লাইনটা দখল নিতে মরিয়া চিলো আগে থেকে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিটা দপ্তরে অভিযোগ করা আছে। বর্তমানে বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে তারা লাইটি দখল করে চাঁদাবাজি করছে। আমরা বর্তমান সরকারের কাছে সন্ত্রাসীদের বিচার চাই। ”
ট্রান্সপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা আরফাত বলেন,’আমাদের অফিসে সন্ত্রাসীরা এসে লুটপাট চালায়। পুলিশ বাহিনী মাঠে থানায় তারা এই কাজ করে।আমাদের অফিসে সবসময় নগদ টাকা রাখা হয়তো, প্রতিদিনের তুলনায় ওইদিন ও নগদ টাকা ছিলো। মামলার আসামি’রা অফিস থেকে নদগটাকাসহ যাবতীয় কাগজ পত্র নিয়ে যায়। অফিসের কর্মকর্তার একটি প্রাইভেট কার ও ভাংচুর করে তারা।”
মামলার বিষয়ে বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘ এ ঘটনার বিষয়ে রেজিয়া বেগম বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। আসামিদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।’
বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজি করায় নগর বিএনপির নেতাদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, কোনও চাঁদাবাজদের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক নেই। আপনাদের এলাকায় কেউ যদি বিএনপির নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করে তাহলে তাকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিন। আর যে নাম গুলো বলা হয়েছে আমরা বিষয়টি মাথায় রাখছি তদন্ত করে সত্যতা নিশ্চিত হলে দল থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানান নেতারা।