প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস চার দিনের সফরে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) ঢাকায় আসছেন। সফরের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার (১৪ মার্চ) তিনি রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন।
প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানিয়েছেন, জাতিসংঘ মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য ইফতারের আয়োজন করা হচ্ছে। এটি প্রধান উপদেষ্টার সৌজন্যে অনুষ্ঠিত হবে, যা রোহিঙ্গাদের জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা হবে। তাদের দুঃখ-দুর্দশার মাঝেও এ আয়োজন কিছুটা স্বস্তি বয়ে আনবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বুধবার (১২ মার্চ) ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান।
আবুল কালাম আজাদ মজুমদার আরও জানান, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আগামীকাল ঢাকায় পৌঁছাবেন এবং ১৬ মার্চ দেশ ছাড়বেন। তার মূল কর্মসূচি ১৪ ও ১৫ মার্চের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। ঢাকায় অবতরণের পর তিনি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এরপরই তিনি কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন এবং তার সঙ্গে একই ফ্লাইটে থাকবেন প্রধান উপদেষ্টাও।
কক্সবাজারে প্রধান উপদেষ্টার বেশ কয়েকটি কর্মসূচি রয়েছে, যার মধ্যে বিমানবন্দরের একটি প্রকল্প উদ্বোধন, জলবায়ু উদ্বাস্তু কেন্দ্র পরিদর্শন এবং একটি মডেল মসজিদের উদ্বোধন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব কক্সবাজারে পৌঁছানোর পর সরাসরি রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাবেন। সেখানে তিনি রোহিঙ্গাদের জন্য পরিচালিত মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের ওপর একটি প্রেজেন্টেশন দেখবেন এবং রোহিঙ্গা কালচারাল সেন্টারে তাদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপভোগ করবেন। এরপর তিনি রোহিঙ্গা তরুণদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন এবং একটি লার্নিং সেন্টার পরিদর্শন করবেন। এসব কর্মসূচি শেষ হলে তিনি রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতারে অংশ নেবেন, যেখানে প্রধান উপদেষ্টাও উপস্থিত থাকবেন।
ইফতার শেষে প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব কক্সবাজার থেকে ঢাকায় ফিরে আসবেন। শনিবার জাতিসংঘ মহাসচিব ঢাকায় তার কর্মব্যস্ত দিন পার করবেন। তিনি জাতিসংঘের বাংলাদেশ কার্যালয় পরিদর্শন করবেন এবং দুপুরে চারটি সংস্কার কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করবেন। পরে তিনি সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।
শনিবার জাতিসংঘ মহাসচিব এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখবেন। সংবাদ সম্মেলন শেষে প্রধান উপদেষ্টার আয়োজিত ইফতার ও নৈশভোজে অংশ নেবেন। রবিবার (১৬ মার্চ) তিনি বাংলাদেশ ত্যাগ করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। জাতিসংঘ মহাসচিবের এই সফর নতুন করে বিশ্ববাসীর নজর কাড়তে পারে এবং সহায়তা সংগ্রহে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষত, রোহিঙ্গাদের জন্য পুষ্টিসহ অন্যান্য মানবিক সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিমাসে প্রায় ১৫ মিলিয়ন ডলার সহায়তা প্রয়োজন হয়, যা অব্যাহত রাখার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা জরুরি।
তিনি আরও জানান, জাতিসংঘ আগামী সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গা ইস্যুতে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনের পরিকল্পনা করছে, যেখানে ফিনল্যান্ড ও মালয়েশিয়া সহ-আয়োজক হিসেবে থাকবে। জাতিসংঘ মহাসচিবের এই সফর ওই সম্মেলনের প্রস্তুতিকে আরও শক্তিশালী করতে পারে এবং রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের একটি কার্যকর উপায় বের করতে সহায়ক হতে পারে।
