‘বাপি বাড়ি যা’ মেজাজে স্টেপ আউট মহারাজের, ‘বারবার কেন আমাকেই রাজনীতিতে জড়ানো হচ্ছে!’/ Sourav Ganguly blast on political polarization in West Bengal

জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly) ত্রিপুরার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর (Brand Ambassador Of Tripura) হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পরই তাঁকে ঘিরে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়ে গিয়েছে। ত্রিপুরার (Tripura) পর্যটন দফতরের শুভেচ্ছা দূত হচ্ছেন টিম ইন্ডিয়ার (Team India) প্রাক্তন অধিনায়ক। মঙ্গলবার অর্থাৎ ২৩ মে বিসিসিআই-এর (BCCI) প্রাক্তন সভাপতিকে প্রস্তাব দিয়েছিল ত্রিপুরার বিজেপি সরকার (BJP)। আলোচনার পর সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন বেহালার বাঁহাতি। ত্রিপুরার পর্যটনকে বাড়ানোর লক্ষ্যে সেই রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী ও তাঁর দলের কয়েকজন ব্যক্তি সৌরভের সঙ্গে তাঁর বাড়িতে এসেও দেখা করেন। সেই ঘটনার পরেই মহারাজকে খোঁচা দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের(TMC) মুখপাত্র কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)। তবে মহারাজও চুপ থাকার পাত্র নন। তিনিও এদিন ক্ষোভ উগরে দিলেন। 

সংবাদমাধ্যমকে ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক বলেন, “ত্রিপুরা থেকে আমার কাছে প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু আমার একটা প্রশ্ন রয়েছে। আমাকে কেন বারবার রাজনীতিতে যোগ করা হচ্ছে! সচিন তেন্ডুলকর কেরালাতে রয়েছে। শাহরুখ খান কলকাতার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। তেমনই গুজরাতের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন অমিতাভ বচ্চন। মহেন্দ্র সিং ধোনি আবার যুক্ত রয়েছে ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে। তাহলে কেন বারবার আমাকে রাজনীতিতে জুড়ে ফেলা হয়!এই ব্যাপারটা আমার কাছে খুবই বেদনাদায়ক। কেউ আমার সঙ্গে দেখা করতে এলে দেখা করতে পারব না? কথা বলতে পারব না? আমি কারও সঙ্গে কথা বললে, কিছু করলেই সব কিছুতেই রাজনীতি যোগ করা হয়! আমি খুবই সাধারণ জীবনযাপন করি। আমার কাছে ত্রিপুরার টুরিস্ট স্পট গুলো প্রমোট করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত ফাইনাল কিছু হয়নি। কিছু করার আগেই সমস্ত কিছুকে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে! দয়া করে এটা করবেন না। এগুলোর কোনও গুরুত্ব নেই।” 

বুধবার অর্থাৎ ২৪ মে একটি সাংবাদিক বৈঠকে এসে সৌরভকে বিঁধলেন কুণাল। সৌরভের ত্রিপুরার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হওয়ার প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে কুণাল বলেন, “সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। সৌরভ খুবই ভালো অলরাউন্ডার। কোথাও তিনি ভালো ব্যাট করেন। তিনি দারুণ ভাবে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারেন। কোথাও তিনি দারুণ বল করেন। আমি তো সৌরভের ফ্যান। ব্যাটিংয়ের সময় হেলমেট ও গ্লাভস নেন, মানে Z ক্যাটেগরির নিরাপত্তা।” 

Read also  দুবাই-অমৃতসর উড়ানে সীমা ছাড়ালেন যাত্রী, বিমানবালার অভিযোগে গ্রেফতার যুবক

আরও পড়ুন: Sourav Ganguly: দাদার বিজেপি-যোগ! তৃণমূলের খোঁচায় বিদ্ধ মহারাজ, রাজনৈতিক চাপানউতোর তুঙ্গে

আরও পড়ুন: Sourav Ganguly: বিজেপি শাসিত ত্রিপুরার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর সৌরভ!

তবে কুণালের নাম মুখে না নিলেও তাঁর কটাক্ষের জবাব দিলেন সৌরভ। বিসিসিআই-এর প্রাক্তন সভাপতি ফের বলেন, “ত্রিপুরার সঙ্গে আজ থেকে আমার সম্পর্ক নয়। মানিক সরকার যখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তখন থেকে সেই রাজ্যের সঙ্গে আমার সম্পর্ক। ১৯৯০ সালে প্রথমবার সেখানে খেলতে গিয়েছিলাম। সব দিক থেকেই ত্রিপুরা অনেক উন্নতি করেছে। তবে বাংলা আমাকে অনেক দিয়েছে। বাংলা থেকে আমি অনেক কিছু পেয়েছি। বাংলার মানুষ আমাকে যা ভালোবাসে, পৃথিবীর কোথাও এতো ভালোবাসা পায়নি। সিকিউরিটি এত বাড়ানো হয়েছে এর মূলত কারণ কি সেটাও আমি জানি না। আমি সবে ফিরেছি, কমিশনারকে জিজ্ঞাসা করব কেন আমার সিকিউরিটি এতো বাড়ানো হল।” 

কয়েকদিন আগেই রাজ্য সরকার সৌরভের নিরাপত্তা বাড়িয়ে দিয়েছিল। অতীতে Y ক্যাটেগরির (Y Category Security) নিরাপত্তা পেতেন মহারাজ। তবে কয়েক দিন আগেই ‘দাদা’-র নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছিল। এবার থেকে Z ক্যাটেগরির (Z Category Security) নিরাপত্তা পাচ্ছেন ভারতের প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক। প্রশাসনিক স্তরে পর্যালোচনার পর সৌরভের নিরাপত্তা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার। তবে মঙ্গলবার অর্থাৎ ২৩ মে বিজেপি শাসিত ত্রিপুরার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়ে যাওয়ার পরেই শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। 

এদিকে ত্রিপুরার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হওয়ার পরেই আসরে নেমে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতারা। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumdar) বলেন, “তৃণমূল সরকার সৌরভকে ধরে রাখতে পারেনি। বাংলার সরকারের উচিত ছিল তাঁকে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর বানানো। বাংলার সরকার সেটা করেনি, তাই তিনি ত্রিপুরায়। আর সেখানেও তো বহু বাঙালি থাকে। তাই উনি বাঙালির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়েছেন।” সুকান্তর আরও দাবি ছিল, “কলকাতার শেরিফ পদ ফাঁকা আছে। আমি দাবি করব, অবিলম্বে সেই পদ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে দেওয়া উচিত।” সৌরভের ত্রিপুরার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হওয়া নিয়ে বাংলার শাসকদলকে খোঁচা দিয়েছেন দিলীপ ঘোষও। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি বলছেন, “ত্রিপুরা খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। সেটা চোখে দেখা যাচ্ছে। তিনি যদি যুক্ত হন তাহলে ভালো। সেখানেও বাঙালি সেন্টিমেন্ট আছে।” 

Read also  Dilip Ghosh: 'পুলিসের ওপর পলিটিক্যাল প্রেসার আছে, তাই পুলিস আক্রমণের শিকার', শাসকদলকে আক্রমণ দিলীপের

বিজেপির এই ‘তৃণমূলের ব্যর্থতা’র তত্ত্ব অবশ্য মানতে নারাজ তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা সৌগত রায়। পালটা দিতে গিয়ে সৌগত বলছেন, “আমার মনে হয় না এর কোনও রাজনৈতিক তাৎপর্য আছে। অবসর গ্রহণের পর থেকে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বিজ্ঞাপন জগতে। কোটি কোটি টাকা রোজগার করছে। আর একটা রোজগার করার পথ খুলে গেল। সৌরভের সঙ্গে এখন ক্রিকেটের সম্পর্ক কম, রাজনীতির সম্পর্ক আরও কম। ওকে ত্রিপুরার লোকেরা ধরেছে। হয়তো বলেছে অনেক টাকা দেব। তাই উনি করছেন।” 

সৌরভের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রেও দাবি করা হচ্ছে, মহারাজের এই পদক্ষেপের পিছনে কোনও রাজনীতি নেই। নিতান্তই বাণিজ্যিক ব্যাপার। এর আগেও বহু তারকা ভিনরাজ্যের পর্যটন বিজ্ঞাপনের মুখ হয়েছেন। সেই ধারা বজায় রেখে এবার ত্রিপুরার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হলেন ‘প্রিন্স অফ ক্যালকাটা’। এবং কটাক্ষকে বরাবরের মতো ‘বাপি বাড়ি যা’ মেজাজে স্টেপ আউট করলেন বেহালার বাঁহাতি। 

(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)  



Source link