পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জয়ের পরে চারিদিকে ছিল কেবলই বন্দনা। সরকারের পক্ষ থেকে টাইগার বাহিনীকে ডেকে নিয়ে পুরস্কৃতও করা হয়েছে। অথচ অল্প কিছুদিনের ব্যবধানে সেই দলকে দেখতে হচ্ছে মুদ্রার উলটো পিঠ।
ভারত সিরিজে গিয়ে যেন বাংলাদেশ দল বলছে, ‘আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন…’। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ধবলধোলাইয়ের পরে এবার টি-টোয়েন্টি সিরিজও খুইয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। আগামীকাল এই সফরের শেষ টি-টোয়েন্টিতে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। তার আগে দলের ভেতরকার হতাশার খবর বেরিয়ে এসেছে।
পরপর চার হারে ভেঙে পড়েছে দলের আত্মবিশ্বাস। ২০ ওভারের ক্রিকেটেও হোয়াইটওয়াশ এড়ানো সম্ভব হবে কি না, সেটি নিয়েও সন্দিহান লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।প্রতি সিরিজ শুরুর আগেই আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে থাকে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। কিন্তু বেশির ভাগ ম্যাচেই নেমে আসে হতাশা। ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নেওয়ার গৎ বাঁধা বুলি বারবার শোনানো হয়। পুরোনো ব্যাটিং ব্যর্থতার রোগ ঘুরেফিরে এসে ঘাড়ে চাপে কোনো এক নতুন দিনে। কোথায় সমস্যা, সমাধানের পথ কোথায়, সেসব জানে না দল, কোচ কিংবা বোর্ড। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে লজ্জাজনক হারের পরে নিজেদের অসহায়ত্বের কথা আর লুকাতে পারেননি পেসার তাসকিন আহমেদ। অবলীলায় বলেছেন নিজেদের হতাশার কথা।
তাসকিন বলেছেন, ‘আমিও দলের অংশ, আমিও খেলোয়াড়। অনেক দিন ধরে আমিও খেলছি, দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের আসলে খুব একটা উন্নতি হয়নি টি-টোয়েন্টিতে। এটা আমাদের ব্যর্থতা। কিন্তু চেষ্টার কোনো কমতি নেই, হচ্ছে না। দেশে যেমনই হোক কিন্তু ভালো কন্ডিশনেও আমরা প্রায়ই ব্যর্থ হয়েছি, ভালো উইকেটগুলোতেও। বমিলিয়ে টি-টোয়েন্টিতে আমাদের উন্নতি খুব কম। এই মুহূর্তে চেষ্টা করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই আমাদের হাতে। সবকিছুর সিদ্ধান্ত তো বোর্ড নেয়। আমরা ক্রিকেটাররা কেবল সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করতে পারি। ব্যর্থ হলে প্রতিবার উন্নতি করার চেষ্টাটা হাতে আছে, আর কোনো কিছুই হাতে নেই।’
এমন হতাশার কারণ শুনতে চাইলে তাসকিন বলেছেন, ‘কারণ যদি বলেন তাহলে আমাদের দক্ষতার হয়তো আরো উন্নতি করতে হবে। একই সঙ্গে দেশে আরো ভালো উইকেটে খেলতে পারলে আরও উন্নতি হবে। এগুলোই বিভিন্ন কারণ।’ নিরুপায় হয়ে দিল্লিতে উপস্থিত বাংলাদেশি গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আপনারাও অনেক দিন ধরে দেখছেন, দুই-একটা কারণ থাকলে বলুন আমাদের, চেষ্টা করব উন্নতি করার।’
দিল্লির উইকেটে নিয়ে বলেছেন, ‘আমরা জানতাম, দিল্লির উইকেটে অনেক রান হবে। কিন্তু আমরা ভালো ব্যাটিং করিনি। দুটি ম্যাচেই উইকেট ভালো ছিল। আমরাই ভালো খেলিনি। দল হিসেবে আমরা আমাদের সেরাটা দিতে পারিনি। সুতরাং দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা ভালো দেখাতে পারিনি।’ তাসকিন আরো বলেছেন, ‘সতেজ উইকেটে খেলা হয়েছে। পাওয়ারপ্লেতে আমরা ভালো রানও করেছিলাম। ওরা শেষের দিকে একটু বেশি ভালো ব্যাটিং করেছে। আর দুর্ভাগ্যজনকভাবে স্পিনারদের দিনটা একটু বেশিই খারাপ গেছে। সাধারণত এত খারাপ যায় না। টি-টোয়েন্টিতে যে কোনো সময় যে কোনো কিছু হতে পারে। শিশির ছিল, বোলারদের বল গ্রিপ করতে সমস্যা হচ্ছিল। বড় রান হওয়ায় হেরে গিয়েছি। প্রথম ১১-১২ ওভার পর্যন্ত আমরা খেলায় টিকে ছিলাম। এই উইকেটে ১৮০ থেকে ১৯০-এর মধ্যে রাখা গেলেও রান তাড়া সম্ভব ছিল। আমরা বেশি রান করতে পারিনি। এটা আমাদের ব্যর্থতা। কিন্তু এই উইকেট অনেক ভালো ছিল।’
প্রতিপক্ষ ভারতকে নিয়ে তাসকিন বলেছেন, ‘ওরা বিশ্বের সেরা দল, এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। ওরা আমাদের চেয়ে অভিজ্ঞ। ওদের কন্ডিশনে তো ওরা ভালোই। কেবল ওদের কন্ডিশন নয়, সারা বিশ্বেই তারা ভালো করে। কিছু উইকেট পড়লেও ওরা আমাদের বোলারদের বিপক্ষে চড়াও হয়েছে। বড় স্কোর হওয়ায় মারতে গিয়ে আমরা দ্রুত উইকেট হারিয়েছি, ছন্দ হারিয়েছি।’ আইপিএলের প্রসঙ্গ নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আইপিএলে বেশির ভাগ ম্যাচই হাই-স্কোরিং হয়। ওরা জানে কীভাবে হাই- স্কোরিং রান তাড়া করতে হয়, হাই-স্কোর কীভাবে করতে হয়। তাদের কাছে ১৮০-২০০ রান খুবই স্বাভাবিক। আমাদের জন্য যেটা ঘরের মাঠে ১৩০, ১৪০, ১৫০ রান। সুতরাং আমাদের এই অভ্যাসটা কিন্তু খুবই কম, এটাই বাস্তবতা। আশা করি, ভবিষ্যতে আমাদের ঘরের মাঠে আরো ভালো হবে। উইকেট ভালো হলে বড় রান তাড়া করার এবং লক্ষ্য দেওয়ার সক্ষমতা বাড়বে। একই সঙ্গে অবসর সময়ে আমরা ফ্রাঞ্চাইজিতে খেলতে পারলে ভালো হবে।’
টি-টোয়েন্টির প্রথম ম্যাচে তাসকিন অনেক রান দিয়েছিলেন বল হাতে। দ্বিতীয় ম্যাচে সতীর্থরা খরুচে থাকলেও ঢাকা এক্সপ্রেস ছিলেন ব্যতিক্রম। বড় রানের ম্যাচেও ৪ ওভারে মাত্র ১৬ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন। এই বিষয়ে বলেছেন, ‘টি- টোয়েন্টি আর ওয়ানডে আলাদা ফরমেট। ২০ ওভারের ক্রিকেটে ভালো বলেও অনেকসময় বাউন্ডারি আসে। আমি চেষ্টা করেছি প্রতিটি বল ভালো করার জন্য। প্রথম ম্যাচে সেভাবে হয়নি, এই ম্যাচে কিছুটা করতে পেরেছি।’
সংবাদ সম্মেলনে সাকিব আল হাসানের প্রসঙ্গও এসেছে। তাকে নিয়ে এই পেসার বলেছেন, ‘সাকিব ভাই আমাদের দলের জন্য সবসময় একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। কিন্তু কিছুদিন আগেই উনি অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। তাতে বাস্তবতা হলো, তাকে ছাড়াই এখন আমাদের মাঠে নামতে হবে। তিনি আমাদের দলের জন্য কিংবদন্তি। আমরা তাকে মিস করছি। কিছু তো করার নেই, বাস্তবতা আমাদের মেনে নিতেই হবে।’