প্রথমে সাধারণ সম্পাদক পরে সভাপতির দায়িত্ব। গত প্রায় ২০ বছর যাবত এভাবে দায়িত্ব নিয়ে চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছেন জাহাঙ্গীর চৌধুরী। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আজীবন সদস্যদের অভিযোগ গত ১৬ বছর যাবত ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রতিষ্ঠানে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করেছে জাহাঙ্গীর চৌধুরী। চলছে নানানমুখী দুর্নীতি ও অনিয়ম।
সিভিল সার্জন কার্যালয় জানায়, এটি সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধিত একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ডায়াবেটিক হাসপাতালে আইসিইউ, সিসিইউ, আন্তঃবিভাগ ও বহির্বিভাগ চিকিৎসাসেবা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোনো অনুমোদন নাই।
গত শনিবার থেকে হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জাহাঙ্গীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছে। আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ক শাওন রেজা বলেন, জাহাঙ্গীর চৌধুরী হাসপাতালে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। তার বিরুদ্ধে কোনো অনিয়ম নিয়ে কথা বললেও চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে। গত সাত-আট বছর যাবত চাকরিজীবীদের কোনো ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানে তার নিকট আত্মীয়স্বজন প্রায় ৪৬ জনকে চাকরি দিয়েছে। হাসপাতালে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পদে তার বিশ্বস্ত লোককে বসিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতি করে চলেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন হাসপাতালের দুর্নীতি নিয়ে অনুসন্ধান করছে। সেনাবাহিনী ও সিভিল সার্জনের কাছে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের স্টাফদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের ৩১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন জাহাঙ্গীর চৌধুরী। বারডেম থেকে বছরে ২ কোটি টাকার অনুদান দেওয়া হলেও এসব টাকার কোনো হিসাব নেই বলে আন্দোলনকারীদের অভিযোগ।
চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল বিষয়ে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম ইত্তেফাককে বলেন, ‘চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতাল সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান। ডায়াবেটিক হাসপাতালে আইসিইউ, সিসিইউ, বহির্বিভাগ ও আন্তঃবিভাগ চালু রয়েছে। কিন্তু এসব চিকিৎসাসেবা পরিচালনা নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি। যদিও আমাদের অনুমোদনের প্রয়োজন রয়েছে। গত কয়েক দিন যাবত এই হাসপাতালে অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। আমি দুই পক্ষকে বসে মীমাংসা করতে বলেছি যাতে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত না হয়। জেলা প্রশাসকও বিষয়টি নিয়ে অবগত আছেন।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জাহাঙ্গীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে সরকারি তহবিল তছরুপসহ স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ও সরকারি অনুদান আত্মসাতের অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনে হাসপাতালের অনুকূলে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বরাদ্দকৃত ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে বরাদ্দকৃত ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ রয়েছে মর্মে মতামত প্রদান করেন। গত ৩১ আগস্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব উম্মে হাবিবা স্বাক্ষরিত পত্রে ১৫ দিনের মধ্যে ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে আদেশ দেন। কিন্তু জাহাঙ্গীর চৌধুরী উক্ত টাকা জমা না দিয়ে আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করেন।
এদিকে চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে বিবিধ অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ায় সমাজসেবা অধিদপ্তর তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটি কর্তৃক বাতিলকৃত প্রতিবেদনে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিগত ২০২৩ সালের ২৫ জানুয়ারি সমাজসেবা কার্যালয় চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পরিচালক মোস্তফা মোস্তাকুর রহিম খানকে প্রশাসক নিয়োগ দেন। কিন্তু জাহাঙ্গীর চৌধুরী উক্ত নিয়োগের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করেন। দুই আদেশের বিরুদ্ধে আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় জাহাঙ্গীর চৌধুরী এখনো পর্যন্ত হাসপাতালের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।