সাংবাদিকের বেতন ৩০ হাজারের নিচে হলে পত্রিকা বা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
বুধবার (১২ মার্চ) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টারদের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা অত শিক্ষিত না হলেও ইউনিয়নের ক্ষেত্রে আপনার আমার থেকে এগিয়ে আছে। তারা মিনিমাম ওয়েজের জন্য লড়াই করে সাড়ে ১২ হাজার টাকা আদায় করেছে এবং কিছুদিন আগে আরও নয় শতাংশ বাড়িয়েছে।
এটা করেছে আন্দোলন করে। ঠিক তেমনি আমার মনে হয় বাংলাদেশের সাংবাদিকদের একটা মিনিমাম বেসিক থাকতে হবে।
সেটা ৩০ হাজার বা ৪০ হাজার হোক। এর নিচে যারা দেবে সেই পত্রিকা বা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হবে।
সেই ওয়েবসাইটের দরকার নেই। ঢাকাচুরি.কম চালানোর দরকার নেই।
প্রেস সচিব বলেন, সাংবাদিকতা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে একটা রক্তচোষার মতো হয়ে গেছে। আমি মনে করি সাংবাদিকদের ইউনিয়ন বা সংগঠনগুলো এখানে ফেল করছে। তাদের আওয়াজ তুলতে হবে। আমরা চাই বাংলাদেশের সাংবাদিকরা ভালো বেতন পাক।
একজন সাংবাদিককে ৫ হাজার, ১০ হাজার টাকা বেতন দেন মালিকরা। কি ভয়াবহ অবস্থা। আমরা আপনাদের স্বীকৃতি দিচ্ছি অথচ কারো বেতন বাড়াচ্ছি না। এটা নিয়ে সত্যিকার অর্থে আপনাদের মুভমেন্ট করা উচিত বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, কেউ কেউ এসে বলেন আমি এটার সম্পাদক। উনি দুই/তিনজন লোক রেখে দিলেন তারা এক/দুইটা রিপোর্ট ভালো করেন। আর বাকিগুলো চুরি করেন। তাদের কাজই হচ্ছে চুরি করা। এই সাংবাদিকতার প্রয়োজন নেই। যারা সারাদিন খেটে সাংবাদিকতা করে তাদের মূল্যায়ন করতে হবে। এজন্য তাদের একটা বেসিক বেতন ধরা উচিত। এই বিষয়ে আপনাদের আন্দোলন করা উচিত। এই জায়গায় আমি আপনাদের সঙ্গে আছি।
শফিকুল আলম বলেন, মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টারদের যে কাজ সেটা সত্যি অভাবনীয়। গত জুলাই আন্দোলনে আমরা প্রথম তথ্য পেয়েছি যারা এই সিটিজেন জার্নালিজম করে তাদের কাছ থেকে। এদের অনেকেই মাল্টিমিডিয়ার রিপোর্টার। তাদের কাজের ব্যাপকতা অনেক। আপনারা দ্রুত মানুষের কাছে নিউজ পৌঁছে দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থে শেখ হাসিনার আমলে কোনো গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ছিল না। আপনাদের হাতেই প্রথম হাসিনাকে পুশব্যাক করেছি। আপনারা স্মার্টলি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আবার ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করেছেন। গণঅভ্যুত্থানে মাল্টিমিডিয়ার যে অবদান সেটা আমরা সারাজীবন মনে রাখবো। এই গণঅভ্যুত্থানে পাঁচজন সাংবাদিক শহীদ হয়েছেন। তাদের নাম সারাজীবন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। বাংলাদেশে আপনাদের ভূমিকা কল্পনাতীত।
প্রেস সচিব বলেন, গতকালকের ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে যে ঘটনা ঘটলো সেখানে যদি ফুল ভিডিও না থাকতো তাহলে আমরা পুলিশের অফিসারকে দোষারোপ করতাম। যখন ভিডিওটা দেখা গেল তখন অনেকেরই চোখ খুলেছে। আপনাদের মনে আছে ইন্টারন্যাশনাল লিগ্যাল রাইটার্স গ্রুপ তারা যাত্রাবাড়ী কিলিংয়ের ওপর ১৫ মিনিটের একটা ডকুমেন্টারি করেছে। জুলাই-আগস্টে যে ভয়ানক মাস-মার্ডার হয়েছে সেটার একটা বড় দলিল হচ্ছে এই ডকুমেন্টারি। এটা তৈরি করেছে ছয় হাজার ভিডিও থেকে। এই যে ভিডিও ও ছবি তোলার কাজটা আপনারা ঝুঁকি নিয়ে করেছেন। এজন্যই এটা সবাই জানতে পেরেছে। এজন্য সবাইকে আপনাদের স্যালুট করা উচিত।
তিনি বলেন, আপনারা অকুতোভয় সাংবাদিকতা করেছেন। আর আমরা অকুতোভয় সাংবাদিকতার গল্প এত দিন শুনে এসেছি। যাদের অকুতোভয় সাংবাদিক হিসেবে জানতাম, দেখি তারা চামচামির সাংবাদিক। তারা এর ওর থেকে টাকা নিয়েছে, প্লট নিয়েছে এগুলোই তারা করে গেছে।
তিনি বলেন, ইউএন ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্ট করেছে। তারা এসব ভিডিও থেকে শনাক্ত করেছে যে বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানে ১৪ হাজার লোককে খুন করা হয়েছে। এর পুরো দায় হচ্ছে শেখ হাসিনা ও তার দোসরের। এজন্য তারা বলেছে শেখ হাসিনাসহ তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে একটা মানবতাবিরোধী আইন করা উচিত। সে যে মানবতাবিরোধী কাজ করেছে সেটা প্রমাণ করেছে এই মাল্টিমিডিয়া ভিডিও। তাই আপনাদের যে অবদান সেটা অবিস্মরণীয়। আপনাদের অবদানের কথা মুখে বললাম আর কিছু করলাম না এটা হতে পারে না।
মাল্টিমিডিয়ার সাংবাদিকদের আরও স্বীকৃতি দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তিনি।
