গত ৫ আগস্ট ২০২৪ ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে বিগত সরকারের পতনের পর হতাহতদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে দেশজুড়ে অসংখ্য মামলা দায়ের হয়েছে। তবে এসব মামলার মধ্যে কিছুতে সমন্বয়হীনতা, অসামঞ্জস্যতা এবং আসামি গ্রেপ্তারের নামে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। নিরপরাধ ব্যক্তিদের আসামি করা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। এই উদ্বেগ তাদের সিনিয়র সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবিরের স্বাক্ষরিত একটি সংবাদ বিবৃতিতে প্রকাশ করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, “ছাত্র-জনতার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা দায়েরের অধিকার জনগণের রয়েছে। কিন্তু উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কাউকে ফাঁসানো বা হয়রানির জন্য আসামি করা মানবাধিকারের পরিপন্থী।”
আসক উল্লেখ করে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকে ছাত্রদের ন্যায্য দাবি সমর্থন ও গোয়েন্দা হেফাজতে আটক নেতাদের পক্ষে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী জেড আই খান পান্নাকে একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় আসামি করা হয়েছে। এছাড়া, ৪ আগস্ট ২০২৪ রাজধানীর জিগাতলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আব্দুল মোতালিবের ঘটনায় তার বাবা আব্দুল মতিন একটি মামলা দায়ের করেন। একই ঘটনায় মো. মাছুম বিল্লাহ নামে এক ব্যক্তিও মামলা করেন, যিনি নিহতের বাবার সঙ্গে অপরিচিত বলে দাবি করেছেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সম্প্রতি একটি হত্যা মামলায় অভিনেতা ইরেশ জাকেরসহ ২৫ জন সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে। আসক মনে করে, এ ধরনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা আইনের অপব্যবহার করে নিরীহ মানুষকে হয়রানি করছে, যা অগ্রহণযোগ্য। বিগত সরকারের সময় ‘গায়েবি’ মামলা নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল, এবং বর্তমানে এ ধরনের মামলা ফিরে আসছে বলে মনে হচ্ছে। কিছু মামলায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে, এবং বেশ কিছু মামলার এজাহার ও আসামির তালিকা অভিন্ন।
আসক জোর দিয়ে বলে, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডসহ সব অপরাধের বিচার জাতীয় দায়িত্ব। তবে ঢালাওভাবে মামলা দায়ের, বিশেষ করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বা অন্য স্বার্থে ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কহীন ব্যক্তিদের আসামি করা অগ্রহণযোগ্য। হত্যা মামলার বিচার সুষ্ঠু তদন্ত, সাক্ষ্য, এবং আলামতের ভিত্তিতে হওয়া উচিত।
আসক দাবি করে, যেসব মামলায় ঘটনার সঙ্গে ন্যূনতম সম্পর্ক নেই, এমনকি বিদেশে থাকা ব্যক্তি বা গণমাধ্যমকর্মীদের আসামি করা হয়েছে, তদন্তের মাধ্যমে তাদের নাম অবিলম্বে বাদ দেওয়া হোক। সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়, এ ধরনের হয়রানিমূলক মামলা বন্ধে জরুরি পদক্ষেপ নিতে।
