চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানার বলুয়ারদিঘির পাড় এলাকায় এক মর্মান্তিক ঘটনায় নিজের অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে বাবাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে তাকে আটক করে হাজতে রাখা হয়েছে বলে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল করিম নিশ্চিত করেছেন।
ঘটনার বিস্তারিত জানা গেছে, শিশুটির মা প্রতিদিন গার্মেন্টসে কাজে বের হলে বাবা প্রদীপ বণিক নাইটগার্ডের দায়িত্ব শেষে বাড়ি ফিরতেন। এই সুযোগে তিনি দীর্ঘদিন ধরে নিজের কন্যাশিশুটির সঙ্গে অনৈতিক ও নিষ্ঠুর আচরণ করছিলেন। এর আগেও এমন ঘটনা ঘটলে শিশুটি মায়ের কাছে কান্নাকাটি করে বিষয়টি জানানোর চেষ্টা করত, কিন্তু মা বিষয়টি বিশ্বাস করতে পারতেন না।
কয়েকদিন আগে আবারও প্রদীপ বণিক শিশুটিকে ধর্ষণ করলে মেয়েটি সারাক্ষণ কান্নাকাটি করতে থাকে। এবার মা তাকে একটি মোবাইল হাতে দিয়ে পরামর্শ দেন, যদি আবার এমন কিছু ঘটে, তাহলে ভিডিও করে রাখতে। রোববার বেলা তিনটার দিকে প্রদীপ বণিক মেয়েকে বিছানায় টানার চেষ্টা করলে শিশুটি মোবাইলে ভিডিও রেকর্ড করে রাখে। গার্মেন্টস থেকে ফিরে মা সেই ভিডিও দেখে হতবাক হয়ে পড়েন এবং চিৎকার করে কান্না শুরু করেন। আশেপাশের আত্মীয়রাও এ সময় ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন।
এরপর বিকেল সাড়ে চারটার দিকে জাতীয় জরুরি সহায়তা সেবা ৯৯৯-এ ফোন করে ঘটনা জানানো হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে প্রদীপ বণিককে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়। ধর্ষণের শিকার শিশুটিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ভর্তি করা হয়।
সোমবার রাত একটার দিকে কোতোয়ালী থানায় এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। শিশুটির মা নিজে স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেছেন। কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল করিম বলেন, “নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ এখন ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত করছে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এই ঘটনায় সমাজে নৈতিকতার চরম অবক্ষয় এবং শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা আবারও স্পষ্ট হয়েছে। পরিবারের ভেতরে এমন নৃশংস ঘটনা শিশু সুরক্ষা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য সামাজিক সচেতনতা ও আইনের কঠোর প্রয়োগের দাবি জানাচ্ছে।
