চট্টগ্রাম সাংবাদিক পাড়ায় ঘটে গেলো এক নাটকীয় রাত। এক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে আরেক সাংবাদিক কে মারধরের অভিযোগ। সমন্বয়কদের দিয়ে প্রভাব খাটিয়ে আরেক সাংবাদিক আটকের অভিযোগও উঠেছে।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) নগরীর কাজির দেউড়ির মোড়ে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতিতে জড়ায় দুই সাংবাদিক বেসরকারি টেলিভিশন ৭১ টিভির ব্যুরো প্রধান সাইফুল শিল্পী ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ২৪ এর চট্টগ্রাম প্রতিবেদক ইবেন মীর। রুপালী বাংলাদেশ পত্রিকার চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান জালাল উদ্দিন সাগরকে আটক করে কোতয়ালী থানা পুলিশ।
জানা যায়, শুক্রবার রাতে নগরীর কাজির দেউড়ি মোড়ে চা খেতে দাঁড়ায় ইবেন মীর এবং অপর আরেকদিকে দাঁড়ায় সাইফুল ইসলাম শিল্পী সহ আরো বেশ কয়েকজন সাংবাদিক। একসময় আটককৃত রুপালী বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান সাইফুল ইসলাম শিল্পী বিরুদ্ধে জিডি করার কারণে সুরাহা করতে ডাক দেয় ইবেন মীরকে। ইবেন মীর গেলে জিডি কেন করচোছ এই কথার পরেই হাতাহাতি জড়ায় সাইফুল ইসলাম শিল্পী ও ইবেন মীর।
এর কিছুক্ষণ পর সমন্বায়ক রাসেল ও পুলিশকে ডেকে আনে সাংবাদিক ইবেন মীর। সমন্বায়ক রাসেলের চাপে এক পর্যায়ে জালাল উদ্দিন সাগর কে আটক করে নিয়ে যায় কোতয়ালী থানা পুলিশ।
এই বিষয়ে স্থানীয় এক গণমাধ্যমকে সাংবাদিক ইবেন মীর জানান, আমি কাজির দেউড়ি মোড়ে চা খাচ্ছিলাম। এ সময় হঠাৎ জালাল উদ্দিন সাগর এসে সমঝোতার কথা বলে আমাকে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে যেতেই সাইফুল ইসলাম শিল্পী আমাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আমার বিরুদ্ধে তুই কেন জিডি করছস?’ জবাবে আমি কিছু বলার আগেই শিল্পী আমাকে এলোপাতাড়ি কিলঘুষি মারতে থাকেন। একপর্যায়ে জালাল উদ্দিন সাগরও আমার ওপর হামলা চালায়। ওই সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন জাহিদুল করিম কচি (আমার দেশ পত্রিকার আবাসিক প্রধান), মুস্তাফা নঈম (কালের কণ্ঠের ব্যুরো প্রধান), আলমগীর সবুজসহ (ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির ব্যুরো প্রধান) আরও কয়েকজন সাংবাদিক।’
এই বিষয়ে নগরীর কোতয়ালী থানায় ৭ জনকে আসামি করে মামলা করেন সাংবাদিক ইবেন মীর। মামলার আসামীরা হলেন, সাইফুল ইসলাম শিল্পী (৪০), জালাল উদ্দিন সাগর (৫২), আরিয়ান লেনিন (৩৫), নাজমুল ইসলাম (৪০), দৈনিক পূর্বদেশের ক্রীড়া সাংবাদিক সাইফুল্লাহ চৌধুরি (৫০), কামরুল হুদা (৬০) এবং এম এ হক শামীম (৩৮)।
ইবেন মীর তার এজাহারে উল্লেখ করেছেন যে, আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন অনিয়ম এবং শিক্ষার্থীদের ওপর নিপীড়ন-অত্যাচারের খবর প্রকাশের কারণে আসামিরা তাকে নানা ধরনের হয়রানির চেষ্টা করে। এ বিষয়কে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে আগেই বিরোধ তৈরি হয়েছিল। এই বিরোধের ধারাবাহিকতায় আসামিরা তাকে শারীরিকভাবে আঘাত করা এবং ক্ষতি করার জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালায়। এ ঘটনায় তিনি কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘৩১ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৮টার দিকে অফিসের কাজ শেষ করে বাসায় ফেরার পথে কাজির দেউরি ট্র্যাফিক পুলিশ বক্সের সামনে পাকা রাস্তায় দাঁড়ালে ২ নম্বর আসামি জালাল উদ্দিন সাগর আমাকে ডাক দেয়। তার কাছে যাওয়া মাত্র অন্য আসামিরা আমাকে মারধর করতে শুরু করে। একপর্যায়ে ১ নম্বর আসামি সাইফুল ইসলাম শিল্পী আমার বুকের দিকে এলোপাতাড়ি ঘুষি মেরে গুরুতর আঘাত করে। ঘুষির আঘাতে আমি মাটিতে পড়ে গেলে জালাল উদ্দিন সাগর আমাকে লাথি ও ঘুষি মারে। তখন সাইফুল ইসলাম শিল্পী আমার গলা চেপে ধরে। আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলেও আসামিরা আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে কিল-ঘুষি চালিয়ে আঘাত করে।’
অপরদিকে রাতে একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে সাইফুল ইসলাম শিল্পী জানায়, দেশটা কি আজ মগেল মুল্লুক..? আওয়ামী দোসর কোতোয়ালি থানার ওসি করিমের নেতৃত্ব সেকেন্ড অফিসার শরীফসহ পুলিশ আমার নাসিমন ভবনের বাসায় হামলা ও ভাঙচুর করেছে। আমার স্ত্রী-সন্তানদের সাথে দুর্ব্যবহার করেছে। সমন্বায়ক পরিচয়ধারী কিছু যুবক আমি সহ ৫ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার করেছে। পুলিশ কমিশনারকে বলার পরও কোন সহযোগিতা পাচ্ছি না। আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
আরেক ফেসবুক পোস্টে লিখেন, সাংবাদিকদের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে সমন্বয়ক পরিচয়ধারী একটি গ্রুপের অযাচিত হস্তক্ষেপ।পুলিশকে চাপ দিচ্ছে আমাকে গ্রেপ্তার করতে!
একটি সূত্রের তথ্যমতে জানা যায়, কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়েরের সময়ও সমন্বয়ক রাসেল সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সমন্বয়ক রাসেলের উপস্থিতেই সাংবাদিক জালাল উদ্দিন সাগরকে গ্রেফতার এবং মামলার চার্জসিট লেখা হয়। মাঝরাতে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব ও আমার দেশ পত্রিকার আবাসিক সম্পাদক সাংবাদিক জাহিদুল করিম কচি ও সাংবাদিক শাহনেওয়াজ রিটন মামলার বদলে বিষয়টি সমঝোতায় সমাধানের প্রস্তাব নিয়ে কোতোয়ালী থানায় গেলে সেখানে উপস্থিত সমন্বয়ক রাসেলের সমর্থকরা ‘দালাল দালাল’ স্লোগান দেন। এর একপর্যায়ে তারা থানা ছেড়ে চলে আসেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
স্থানীয় পত্রিকা চট্টগ্রাম প্রতিদিনের এক প্রতিবেদনে ঘটনার মূল সুত্র উল্লেখ করা প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটিতে ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের সংবাদকর্মী ইবেন মীরকে সদস্য হিসেবে মনোনীত করা হয় গত ২৬ জানুয়ারি। এ সিদ্ধান্তে বিএনপি-জামায়াতপন্থী সাংবাদিকদের একটি অংশ অসন্তোষ প্রকাশ করে। তাদের দাবি, ফেনীর বাসিন্দা ইবেন মীরের কোনো ক্রীড়া সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা নেই। তাদের অভিযোগ, কয়েকজন সমন্বয়কের সুপারিশের ফলেই তিনি এই কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ওই সাংবাদিকদের একটি অংশ স্টেডিয়াম এলাকায় মানববন্ধনও আয়োজন করে, কারণ তাদের পছন্দের ব্যক্তিদের কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়নি।
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ইবেন মীর ২৯ জানুয়ারি কোতোয়ালী থানায় সাইফুল ইসলাম শিল্পীসহ চারজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ভাষা ব্যবহার এবং হুমকির অভিযোগে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এই অভিযোগের প্রতিবাদে শিল্পীর সমর্থকরা চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।
স্টাফ রিপোর্টার,
বাংলা আপডেট