অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। তাঁরা ছাত্র-জনতার উদ্যোগে গঠিত হতে যাওয়া নতুন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে আসতে পারেন বলে জানা গেছে। এজন্যই এই দুই উপদেষ্টার পদত্যাগের আলোচনা চলছে। এছাড়া আগামী জুন মাসে আরেক উপদেষ্টা মাহফুজ আলমও পদত্যাগ করতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। – খবর আমার দেশ-এর
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানাচ্ছে, নতুন রাজনৈতিক দলটি প্রথমে একটি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করবে। আহ্বায়ক কে হবেন, তা এখনও নিশ্চিত নয়, তবে নাহিদ ইসলাম সদস্যসচিব হচ্ছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। দলটির গঠনতন্ত্র প্রণয়নের কাজ চলছে।
নাহিদ ইসলাম কেন সরকার ছেড়ে নতুন দলে যোগ দিচ্ছেন—এমন প্রশ্নের উত্তরে জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা জানান, জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। আন্দোলনের শুরু থেকেই তিনি সামনের সারির নেতৃত্বে ছিলেন এবং এক দফার মূল ঘোষক হিসেবে পরিচিত। ছাত্রসমাজের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা থাকায় নতুন দলে তাঁর যুক্ত হওয়া স্বাভাবিক বলে মনে করছেন অনেকে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির একটি সাম্প্রতিক বৈঠকে বেশিরভাগ সদস্য মত দিয়েছেন যে, অন্তর্বর্তী সরকারের ছাত্র উপদেষ্টাদের মধ্যে যাঁদের গ্রহণযোগ্যতা বেশি, তাঁদের পদত্যাগ করে নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগে নেতৃত্ব দেওয়া উচিত।
জাতীয় নাগরিক কমিটির তথ্য অনুসারে, নতুন দল ঘোষণার আগে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হবে। সম্ভাব্য আহ্বায়ক হিসেবে নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমের নাম আলোচনায় রয়েছে। আহ্বায়ক কমিটির কাজ হবে দলকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠা করা এবং পরবর্তী পর্যায়ে কাউন্সিলের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ নেতৃত্ব নির্বাচন করা।
এ বিষয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের প্রতি জনগণের প্রত্যাশা হলো, আন্দোলনের নেতারা সরকার থেকে সরে এসে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করবেন। তাই ছাত্রপ্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানাই, তাঁরা যেন জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী এগিয়ে আসেন।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের কৃষক, শ্রমিক ও ছাত্রসমাজ চাই ফ্যাসিস্ট সরকারকে সরিয়ে একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হোক।”
ছাত্র উপদেষ্টাদের সম্ভাব্য পদত্যাগ নিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন জানান, “কারা পদত্যাগ করবেন বা নতুন রাজনৈতিক দলে যুক্ত হবেন, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে পরিষ্কার সিদ্ধান্ত হলো, সরকারে থেকে কেউ রাজনৈতিক দলে যুক্ত হতে পারবেন না। দলে আসতে হলে অবশ্যই সরকার থেকে পদত্যাগ করতে হবে।”
নতুন দলের গঠনতন্ত্র নিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির সহ-মুখপাত্র মুশফিক সালেহীন বলেন, “গঠনতন্ত্র তৈরির কাজ চলছে। বিভিন্ন দেশে গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত রাজনৈতিক দলগুলোর গঠনতন্ত্র পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এর মধ্যে তুরস্কের একে পার্টি, পাকিস্তানের তেহরিক-ই-ইনসাফ ও ইন্দোনেশিয়ার আন্না হাদা পার্টির গঠনতন্ত্র বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।”
নতুন দলটি মধ্যপন্থি রাজনৈতিক আদর্শ ধারণ করবে বলে জানা গেছে। মুশফিক সালেহীন মনে করেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি মধ্যপন্থার ওপর নির্ভর করবে। গণতান্ত্রিকভাবে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে এবং তৃণমূল পর্যায়ের নেতারাও শীর্ষ পর্যায়ে আসার সুযোগ পাবেন। কারো একক সিদ্ধান্তে কমিটি গঠিত হবে না; বরং কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্ধারিত হবে। পররাষ্ট্রনীতিতে দলটি বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে ন্যায্য সম্পর্ক বজায় রাখার পক্ষে থাকবে।
গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীদের সংগঠন জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে দল ঘোষণা করতে চায়। নতুন দল ঘোষণার আগে ২৪ দফার ইশতেহার তৈরির কাজ চলছে এবং এ লক্ষ্যে ১৭ সদস্যের একটি কমিটি কাজ করছে।